OrdinaryITPostAd

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির চিকিৎসা সর্ম্পকে বিস্তারিত জানুন

 

আপনি কি পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি জনীত সমস্যায় ভুগছেন? পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে? পায়ের গোড়ালি ব্যথা কেন হয়? পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি হবার দরুন পায়ের গোড়ালি ব্যথা এটা কি ঘরোয়া উপায়ে নির্মূল করা যায়? হাঁটলে, দাঁড়ালে বা দৌড়ালে প্রচণ্ড পায়ের গোড়ালি ব্যথা হয়? পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি অস্বাভাবিক হবার কারণ হলো, আপনার গোড়ালিকে ঘর্ষণ ও চাপ থেকে রক্ষা করে যে পেশী টেন্ডন অথবা লিগামেন্ট সেগুলির ক্ষতি বা আঘাত পাওয়ার দরুন ক্যালসিয়ামের জমা হওয়া।
পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির চিকিৎসা
আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনে পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি সংক্রান্ত সমস্যার ভুক্তভূগী হন তবে আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

ভূমিকা

পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ জেনে নেওয়ার আগেই প্রথমে এর গঠন সম্পর্কে কিছুটা ধারনা থাকা দরকার। আমাদের পায়ের সামনের অংশ কিছু ছোট ছোট হাড় এবং পিছনের গোড়ালি একটি বড় ক্যালকানিয়াস নামক হাড় দিয়ে গঠিত। এই হাড় গুলোর মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে থাকে কিছু লিগামেন্টস। এ ছাড়াও আমাদের পায়ের গোড়ালি থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত একটি শক্ত ব্যান্ড থাকে যাকে প্লান্টার ফাসা বলে।প্লান্টার ফাসার প্রধান কাজ হল শরীরে সমস্ত ওজন যেন সরাসরি হাড়ের উপর চাপ প্রয়োগ করতে না পারে এবং পায়ের আকৃতির ঠিক থাকে। এক কথায় এই ব্যান্ডটি আমাদের শরীরের আঘাত সহনশীলতা এর মত কাজ করে।

হাড় বাড়ে কেন

শরীরে বিভিন্ন হাড়ে অতিরিক্ত হাড় গজায়। তন্মধ্যে ক্যালকেনিয়াম (পায়ের হাড়) অন্যতম। সাধারণত অতিরিক্ত হাড় গোড়ালির নিচে ও পেছনে গজায়। এ অতিরিক্ত হাড়কে ক্যালকেনিয়াম স্পার বলে। পায়ের সবচেয়ে বড় হাড় ক্যালকেনিয়াম যা দাঁড়ালে বা হাঁটলে প্রথম মাটির সংস্পর্শে আসে এবং শরীরের পূর্ণ ওজন বহন করে। এর যে কোন ক্ষুদ্র অসঙ্গতির ফলে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।
অসঙ্গতিপূর্ণ জুতা পরিধান করলে স্পার হয়। লেগের পেশি দুর্বল হলে পায়ের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলে স্পার তৈরি হয়। দীর্ঘদিন ধরে প্লান্টার ফাসা ও টেনডনের প্রদাহ হলে গোড়ালিতে অতিরিক্ত হাড় গজায়। শরীরে অতিরিক্ত ওজন থাকলে স্পার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস যেমন রিউমাটয়েড ও অসটিওআর্থ্রাইটিসে হিল স্পার হয়। অনেকের বংশানুক্রমিকভাবে স্পার তৈরি হয়।

হাড় বেড়ে যাওয়ার চিকিৎসা

গোড়ালি ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে তারমধ্যে টিগার পয়েন্ট ইঞ্জেকশন, ইনফিল্ট্রেশন, পিআরপি এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অন্যতম। বর্তমান সময়ে গোড়ালি ব্যথা কমাতে ফিজিওথেরাপি একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি। একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা, এক্সরে ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করেন এবং চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।নিয়মিত সপ্তাহ খানিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে গোড়ালি ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া।

১০ মিনিট করে দিনে দুই থেকে তিনবার বরফ সেঁক নেওয়া।

কম্প্রেশন ব্যান্ডেজ ইনজুরির স্থান পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং নতুন করে ইনজুরি হওয়ার প্রবণতা কমায় ।

পা স্বাভাবিক অবস্থান থেকে একটু উপরে রাখা যাতে করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং পায়ের ফোলা ভাব কমে যায়।

ননস্টেরয়েডাল এন্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগস, যেমন: প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ পাঁচ থেকে সাত দিন খেলে ব্যথা অনেকটাই কমে যায়।

গোড়ালির উপর চাপ পরে না, যার ভেতরে ইনসোল বা হিলপ্যাড আছে এই রকম জুতা ব্যবহার করতে হবে হবে।

পায়ের হাড় বাড়লে কি করতে হবে

গোড়ালি ব্যথা প্রাথমিক চিকিৎসা ও সতর্কতার মাধ্যমে যদি ব্যথা না কমে তাহলে একজন অভিজ্ঞ ফিজিশিয়ান অথবা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের (ফিজিওথেরাপিস্ট) পরামর্শ মতে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। গোঁড়ালি ব্যথায় ফিজিওথেরাপী খুবই কার্যকরী চিকিৎসা। আলট্রাসাউন্ড থেরাপী, প্যারাফিন ওয়াক্স বাথ, ডিপ ট্রান্সভার্স ফ্রিকশন ম্যাসেজ, স্ট্রেচিং প্রোগ্রাম, স্ট্রেঙ্থেনিং প্রোগ্রাম, টেপিং গোড়ালি ব্যথায় খুবই কার্যকরী।
গোড়ালির ব্যথা কমাতে স্ট্রেচিং প্রোগ্রাম: শুধুমাত্র ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ, ঔষধ, জুতো এবং খাদ্য বাস নিয়ন্ত্রণ রাখলেই চলবে না তার সাথে নিয়মিত কিছু ব্যায়ামও প্রয়োজন। আসুন জেনে নেই যেভাবে আমরা বাসায় ব্যায়ামগুলো করতে পারি:

ফ্লোরে বা চেয়ারে বসে হাঁটু লক করে যে কোনো এক পা সোজা রাখুন। এবার একটি বড় ফিতা অথবা তোয়ালে দিয়ে পায়ের পাতার সামনের অংশে আটকে দিয়ে দুই প্রান্ত দুই হাত দিয়ে হালকা চাপে রাখুন বা টানুন ৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এটি ১০ বার করে দিনে ৩-৪ বার করুন।

একটি আধা লিটার পানির বোতল পুরোপুরি বরফ জমাট করে পায়ের নিচে রেখে রোল করতে হবে ৩০ সেকেন্ড। এটি দিনে ৩- ৪ বার করুন।

একটি টেনিস বল পায়ের গোড়ালি থেকে পাতা পর্যন্ত ১৫-২০ বার রোলিং করুন। এটি দিনে ৩- ৪ বার করুন।

হাত দিয়ে পায়ের পাতায় ম্যসেজ করে দিতে হবে। কেন্দ্র থেকে বাহিরের দিকে। এটি দিনে ৩- ৪ বার করুন।

সিঁড়িতে পায়ের পাতার সামনের দিকের অংশ রেখে বাকি অংশ বাইরে রেখে যে কোনো এক পায়ের উপর ভারসাম্য রেখে দাঁড়াতে হবে ৩০ সেকেন্ড অথবা কোনো দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে গোঁড়ালি তুলে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের উপর ভর করে দাঁড়ান এবং ৩০ সেকেন্ড ধরে রাখবেন। এটি ১০ বার করে দিনে ৩-৪ বার করুন।

দুই হাত দুই পাশে মাটিতে স্পর্শ করে এক হাঁটু মুড়ে বসে যে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা অনুভূত হয় সে পায়ের পাতা মাটিতে রেখে গোড়ালি কিছুটা উঁচু করে বসতে হবে, যাতে করে পিছনের অংশের চাপে পায়ের উপর পরে ৩০ সেকেন্ড এভাবে থেকে আস্তে আস্তে পিছনের অংশ দিয়ে পায়ের উপর চাপ কমাতে হবে। এইভাবে তিনবার করতে হবে যদি হাটুতে অথবা কোমরে ব্যথা লাগে সে ক্ষেত্রে জোর করে এই ব্যায়াম করা উচিত না।

পায়ের গোড়ালি ব্যথার ঔষধ এর নাম

গোড়ালিতে তীব্র ব্যথা হলে এবং ব্যথার ফলে স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হলে সে ক্ষেত্রে ট্রিগার পয়েন্ট ইনজেকশনের মাধ্যমে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করে সাময়িকভাবে ব্যথা কমানো যায়। তবে স্টেরয়েড প্রয়োগের পূর্বে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দিকে নজর রাখতে হবে।

পিআরপি মানে হচ্ছে প্লাটিলেট রিচ ইন প্লাসমা। পিআরপি বর্তমান সময়ে খুবই আধুনিক একটি চিকিৎসা পদ্ধতি এতে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত মেশিনে দিয়ে রক্তকণিকা আলাদা করে এই পিআরপি তৈরি করা হয়। যাতে প্রচুর পরিমাণে গ্রোথ ফ্যাক্টর থাকে যা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয় পূরণের সহায়তা করে। দীর্ঘ মেয়াদী ও জটিল প্লান্টার ফ্যাসাইটিস জনিত গোড়ালি ব্যথায় পিআরপি থেরাপি খুব ভালো কাজ করে। এটি একটি স্থায়ী এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি।

পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

বিশ্রাম, আইসপ্যাক ব্যবহার, পা উঁচু করে রাখা আর প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। কারও কারও স্টেরয়েড প্রয়োগ করে সাময়িকভাবে ব্যথা কমানো যায়। কিছু ফিজিওথেরাপি কাজে আসতে পারে।

মেঝেতে বা চেয়ারে বসে যেকোনো এক পা সোজা রাখুন। এবার একটি বড় ফিতা পায়ের পাতার সামনের দিকে আটকে দিয়ে দুই প্রান্ত দুই হাত দিয়ে ৩০ সেকেন্ড ধরে হালকা চাপে রাখুন বা টানুন। এভাবে উভয় পায়ে করুন।
আধা লিটার পানির বোতল পুরোপুরি বরফ জমাট করে পায়ের নিচে রেখে রোল করতে হবে ৩০ সেকেন্ড। হাত দিয়ে পায়ের পাতায় ম্যাসেজ করে দিতে হবে, কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে।

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির হোমিও চিকিৎসা

গোড়ালি ব্যথার মোক্ষম হোমিওপ্যাথিক দাওয়াই গোড়ালি ব্যথার অন্যতম কারণ হল প্লান্টার ফ্যাসাইটিস। প্লান্টার ফ্যাসিয়া নামক টিস্যু যা ব্যান্ডের আকারে আমাদের পায়ের গোড়ালি থেকে বুড়ো আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে, এরই প্রদাহকে প্লান্টার ফ্যাসাইটিস বলে।
হোমিওপ্যাথিতে এই রোগের খুব ভালো চিকিৎসা আছে। লক্ষণ অনুযায়ী অনেক ওষুধ থাকলেও নিম্নলিখিত ওষুধগুলি তৎক্ষণাৎ খুব ভালো কাজ দেয়।

রাস টক্স (Rhus Tox): সকালে হাঁটতে গেলে ব্যথা তারপর ধীরে ধীরে হাঁটলে ব্যথা কমে যায়, সেক্ষেত্রে এই ওষুধটি খুব ভালো কাজ দেয়।

ব্রায়োনিয়া অ্যালব (Bryonia Albo): বিশ্রাম অবস্থায় কোনও ব্যথা নেই। কিন্তু নড়াচড়া করলেই ব্যথা বাড়ে সেক্ষেত্রে এই ওষুধটি উপকারী।

ম্যাগ ফস্‌ (Mag Phos): ব্যথায় গরম দিলে আরাম হয় সেক্ষেত্রে এই ওষুধটি উপকারী।

লিডাম পল (Ledum Pal): ব্যথায় বরফ দিলে আরাম সেক্ষেত্রে ওষুধটি কার্যকরী।

শেষকথা

আমাদের শারীরিক ও মানসিক অশান্তির অন্যতম কারণ হচ্ছে ব্যথা ।ব্যথা আমাদের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে। তাই ব্যথা মুক্ত জীবন যাপন করতে হলে আমাদের আগেই সতর্ক হতে হবে।একটু সতর্ক হলেই আমরা ব্যথামুক্ত সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করতে পারি।
প্রিয় পাঠক আমাদের আজকের প্রতিবেদনটি আপনার কেমন লাগল বা এর ফলে আপনি কতটুকু উপকৃত হয়েছেন তা আমাদের কমেন্টে জানাবেন। কারন আপনাদের প্রত্যেকটি মতামত আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুতবপূর্ণ। ধন্যবাদ ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪