OrdinaryITPostAd

বাতজ্বরের কারণ ও লক্ষণ সর্ম্পকে বিস্তারিত জানুন

 

আপনি কি জানেন বাতজ্বর এর কারন কি? বাতজ্বর এর কারনে কি কি সমস্যা হতে পারে? বাতজ্বর এর কারন বাচ্চার কোন আসুবিধা দেখা দেয়? বাতজ্বর এর লক্ষন কি? বাতজ্বর এর লক্ষন দেখা দিলে আমাদের করনীয় কি? আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত হলেও এটি নিয়ে সাধারনের মানুষের মাঝে রয়েছে দারুণ ভুল ধারনা।আবার এই বাতজ্বরকে কেন্দ্র করে গ্রামাঞ্চলে কোয়াকদের রয়েছে অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের হিড়িক।
সাধারণত মনে করা হয় গিরায় গিরায় কিংবা হাড়ে হাড়ে ব্যথা হলে সেটা বাতজ্বরের লক্ষণ। তবে সবক্ষেত্রেই তা সঠিক নয়। বাতজ্বরের কিছু মুখ্য ও কিছু গৌণ লক্ষণ রয়েছে। দুটি কিংবা একটি মুখ্য লক্ষণের সঙ্গে দুটি গৌণ লক্ষণ নিশ্চিতভাবে মিলে গেলে বাতজ্বর নির্ণয় করা যায়। তার সঙ্গে বিটা হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাসজনিত সংক্রমণের ইতিহাস বা প্রমাণও থাকতে হবে।

ভূমিকা

তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাত জ্বর বা রিউমেটিক ফিভার বাংলাদেশেও অতিপরিচিত রোগ। শিশুরা সাধারণত এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। ৫-১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশসাধারণত, হাড়ে হাড়ে অথবা গিরায় গিরায় ব্যথাকে বাত জ্বর বা রিউমেটিক ফিভার হিসেবে ধরা হয়। তবে সব সময় এ ধারণা সঠিক নয়।
বাত জ্বরে কেউ আক্রান্ত হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর অতীত ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হয়।

বাতজ্বর কাকে বলে

বাতজ্বর (ইংরেজি: Rheumatic fever) হলো প্রদাহজনিত রোগ যা হৃৎপিন্ড, ত্বক, মস্তিস্ক কে আক্রান্ত করতে পারে। এই রোগ সাধারণত গলায় সংক্রমণের দুই থেকে চার সপ্তাহ পরে শুরু হয়। লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, জয়েন্টে ব্যথা,কোরিয়া, ইরায়থেমা মারজিনেটাম। প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ড আক্রান্ত হয়। বাতজ্বরের জন্য দায়ী ব্যাক্টেরিয়া হলো স্ট্রেপটোকক্কাস পায়োজেনস।

বাতজ্বরের কারণ

এই রোগে ব্যক্তির নিজের শরীরের টিস্যুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তবে যাদের শরীরে এই রোগের জিন রয়েছে তারা অন্যদের তুলনায় খুব সহজে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে পুষ্টিহীনতা, দারিদ্র্য প্রভৃতি। এই রোগ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে উপসর্গগুলোর পাশাপাশি স্ট্রেপ্টোকক্কাস দ্বারা সংক্রমিত হবার প্রমাণ থাকা জরুরি।

শিশুদের বাতজ্বর

বাতজ্বরকে ইংরেজিতে বলে রিউমেটিক ফিভার, এটা বাচ্চাদের প্রদাহজনিত রোগ। গলায় স্ট্রেপটোকক্কাস নামের অণুজীবের সংক্রমণের পর তার বিরুদ্ধে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা আবার হৃৎপিন্ড, ব্রেইন, পিঠ, চামড়া ইত্যাদি স্থানের টিস্যুকে আক্রমণ করে প্রদাহজনিত রোগের সৃষ্টি করে।
সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সের বাচ্চাদের বাতজ¦র বেশি হয়। দলবদ্ধ থাকলে বা ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় বসবাস করলে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তবে রোগ হওয়ার ৭ দিনের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা শুরু করলে বাতজ¦রের ঝুঁকি কমে যায়।

বাতজ্বরের লক্ষণ

বাতজ্বর ব্রেইন, হৃৎপিন্ড, মেরুদন্ড ও ত্বক ইত্যাদি স্থানকে আক্রান্ত করে। বাতজ¦রের ৫টি মুখ্য এবং কিছু গৌণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মুখ্য বৈশিষ্ট্য হলোÑ ১. হৃৎপি-ের প্রদাহ ২. হাত ও পায়ের বিভিন্ন জয়েন্টে প্রদাহ ৩. ব্রেইন প্রদাহজনিত কাঁপুনি ও খিঁচুনি ৪. চামড়ায় লাল দাগ।
আর গৌণ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে হাতে-পায়ে হালকা ব্যথা, জ্বর বেড়ে যাওয়া এবং উচ্চতা বেড়ে যাওয়া।
গৌণ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে হৃৎপিন্ড প্রদাহ শতকরা ৪০ থেকে ৮০ ভাগ বাচ্চার হতে পারে। হৃৎপি-ের কম্পন বেড়ে যাওয়া এবং হৃৎপিন্ড বড় হয়ে যাওয়া, অনিয়মিত স্পন্দনও লক্ষণ। এছাড়া শতকরা ৭০ ভাগ রোগীর হাত-পায়ের জয়েন্টে এই প্রদাহ হতে পারে। এর ফলে জয়েন্ট ব্যথা করে এবং ফুলে যায়। সাধারণত মাংসপেশিতে ব্যথা করে না।
তাই পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথা হলেই বাতজ্বর ভাবা ঠিক নয়। পায়ে ব্যথার কারণ হলো ‘গ্রোয়িং পেইন’ নামক সাধারণ সমস্যা। ‘গ্রোয়িং পেইন’ হলেও শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ধারনা করা হয়, শিশুর সারা দিনের দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি ও খেলাধুলা এর জন্য দায়ী। সাধারণত তিন বা চার বছর বয়স থেকে শিশুর গ্রোয়িং পেইন শুরু হয় এবং আট থেকে বারো বছর বয়স পর্যন্ত এই ব্যথা অনুভব করে। পরে ধীরে ধীরে ব্যথার মাত্রা কমে যায়। 
শিশুর গ্রোয়িং পেইন তেমন কোনো ক্ষতি করে না। বেশিরভাগ সময় গ্রোয়িং পেইন শিশুর উরুর সামনের বা পায়ের পেছনের মাংসপেশিতে হয়। কখনো কখনো হাতেও ব্যথা হতে পারে। তবে কখনোই এই ব্যথা হাত-পায়ের কোনো জয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত করে না। শিশুর গ্রোয়িং পেইন কমানোর জন্য তার পায়ের মাংসপেশির কিছু ব্যায়াম করতে হবে। পাশপাশি হালকা গরম করে সেক দেওয়া এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিতে হবে।

বাতজ্বর থেকে মুক্তির উপায়

ব্যথা এবং রোগের অন্যান্য উপসর্গ ভালো না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে প্রয়োজনে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে এবং আক্রান্ত জয়েন্ট নড়াচড়া করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ব্যথানাশক ঔষধ হিসেবে অ্যাসপিরিন খাওয়া যেতে পারে।প্রদাহ কমানোর জন্য অ্যাসপিরিনের পাশাপাশি কর্টিকোস্টেরয়েড যেমন- প্রেডনিসোলনব্যবহার করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক যেমন- বেনজাথিননপেনিসিলিন, ফিনক্সিমিথাইলপেনিসিলিন, ইরাইথ্রোমাইসিনপ্রভৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে। 
বাতজ্বরের জীবাণু নাক, গলাও ত্বকে বাস করে। অপরিষ্কার থাকলে, ঘরদোরপরিচ্ছন্ন-পরিচ্ছন্ন না রাখলে এ রোগের জীবাণু একজন থেকে অন্যজনে ছড়াতে পারে। প্রতিদিন সাবান দিয়ে গোসল করলে, হাতও নাক পরিষ্কার রাখলে, প্রতিদিনঅন্তত একবার গড়গড়া করে গলা পরিষ্কার করলে এ রোগের জীবাণুর আক্রমন প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে।
বাতজ্বর ছোঁয়াচে রোগ নয়। বাতজ্বরের রোগীর সঙ্গে থাকলে, খেলে, ঘুমালে এমনকি ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করলেও বাত জ্বর হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। গর্ভাবস্থায় মা থেকে শিশুর দেহে সংক্রমণের কোন আশঙ্কা নেই। সাধারনত বাত জ্বর সন্দেহ হলেই চিকিৎসকেরা রক্তের অ্যান্টি-স্ট্রেপটোলাইসিন-ও বা এ এস ও পরীক্ষা করে থাকেন।এএসও বেশি হওয়ার অর্থই কিন্তু বাতজ্বর নয়। 
বাতজ্বর হলে অবশ্যই উপরোল্লিখিত মূখ্য ও গৌণ লক্ষণ বা উপসর্গগুলো থাকতে হবে। কোন লক্ষণ বা উপসর্গের উপস্থিতি না থাকলে বাতজ্বর হয়নি বলে ধরা হবে। সবশেষে, স্ট্রেপ্টোকক্কাসদ্বারা কণ্ঠনালীর সংক্রমণে পেনিসিলিন দ্বারা চিকিৎসা করালে বাতজ্বর হবার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

বাতজ্বরের পরীক্ষার নাম

কিছুদিনের জ্বর, গিঁটে গিঁটে ব্যথা। নানা ধরনের পরীক্ষা করিয়েছেন। তার মধ্যে একটি হলো এএসও টাইটার। হয়তো স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই আছে এটি। তাতেই আঁতকে উঠছেন—বাতজ্বর হয়েছে। তার মানে দীর্ঘদিন ধরে ইনজেকশন দিতে হবে বা ওষুধ খেয়ে যেতে হবে।
আমাদের দেশে গ্রামে বা মফস্বলে ব্যাপকভাবে এই পরীক্ষা করা হয়, পেনিসিলিন দিয়ে বাতজ্বরের চিকিৎসাও শুরু হয়। আসলে এটা ঠিক নয়। অনেক ধরনের জ্বরেই গিঁটে ব্যথা থাকতে পারে, সাধারণ ভাইরাস জ্বরেও। তবে এএসও টাইটার বাড়া মানেই বাতজ্বর, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
অনেকের মনে, এমনকি অনেক চিকিৎসকের মনেও এ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের পর এএসও টাইটার বৃদ্ধি পায়। কিন্তু শুধু এএসও টাইটার পরীক্ষা করেই বাতজ্বর নির্ণয় করা যায় না। রোগীর পূর্ব ইতিহাস, উপসর্গ ও অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি এএসও টাইটার বাতজ্বর সম্পর্কে একটা সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে মাত্র। এটি বাতজ্বর নির্ণয়ের একটি সহায়ক পরীক্ষা মাত্র।

বাতজ্বরের ঔষধ এর নাম

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে ও আক্রান্ত জয়েন্ট নড়াচড়া করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ব্যথানাশক ঔষধ হিসেবে অ্যাসপিরিন খুবই কার্যকর। প্রদাহ কমানোর জন্য অ্যাসপিরিনের পাশাপাশি কর্টিকোস্টেরয়েড যেমন প্রেডনিসোলন ব্যবহৃত হয়। এর পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক যেমন ফিনক্সিমিথাইলপেনিসিলিন, বেনজাথিন পেনিসিলিন ও ইরাইথ্রোমাইসিন প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়।
৫-১৫ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের গলায় প্রদাহ বা গলা ব্যথা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করানো হলে বাতজ্বরের আক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। Inj. Benzathine Penicillin for IM সিঙ্গেল ডোজ অথবা PhenoxymethylPenicillin ট্যাবলেট/ সিরাপ ১০দিন গ্রহণ করলেই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে কোনোকিছুই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা যাবে বাত জ্বর হয়েছে, এমন সন্দেহ হলে প্রথমেই একজন এমবিবিএস ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

শেষকথা

যেসব শিশু-কিশোররা বাত জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে কিন্ত হৃদযন্ত্রের কোনো ক্ষতি হয়নি, তাদের পরের ৫ বছর অথবা ২১ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। বাত জ্বরজনিত হৃদরোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত অথবা আজীবন এই ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপসর্গ ভালো হয়ে গেলেও বাত জ্বরের প্রতিষেধক চিকিৎসা বন্ধ করা উচিৎ নয়। এই রোগ একবার হলে, বারবারই হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বাত জ্বর বা রিউমেটিক ফিভারে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতে নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ করতে হবে। এতে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

Sources:

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪